৩ আগস্ট ২০২৪: শহীদ মিনার থেকে ঘোষিত হয় সরকার পতনের এক দফা

সংগৃহীত ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক : চব্বিশের ৩ আগস্ট আন্দোলনকারীদের কাছে ছিল ৩৪ জুলাই। এদিন নানা শ্রেণী-পেশার আপামর জনসাধারণ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হয়। উদ্বেলিত ছাত্র-জনতার প্রতিবাদী স্লোগানে প্রকম্পিত হয় ঢাকার আকাশ-বাতাস।

 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্ব ঘোষিত এই কর্মসূচিতে যোগ দিতে এদিন সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলে দলে মিছিল আসতে থাকে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই পুরো এলাকাটি জনসমুদ্রে পরিণত হয়। ৩ আগস্ট বিকেলে তৎকালীন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা সাফ জানিয়ে দেন ছাত্র-জনতার রক্তে রঞ্জিত আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। দাবি এখন একটাই- স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতন।

 

শিক্ষার্থীদের পক্ষে তৎকালীন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম সরকার পতনের এক দফার ঘোষণা দেন। তিনি বলেছিলেন, শেখ হাসিনার সরকার ও ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থার পতন ঘটাতে হবে।

 

এদিকে, শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে এদিন ব্যান্ড ও সংগীত শিল্পীরাও মাঠে নামেন। ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোবরে সংহতি জানিয়ে শিল্পীদের অনেকেই শহীদ মিনারে যোগ দেন। এছাড়াও, সেদিন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারাও সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন।

 

অন্যদিকে, ওইদিন বিএনপি তাদের অবস্থান জানালে সমর্থন আরও জোড়ালো হয়। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, শুধু নৈতিক সমর্থন নয়, আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সব ধরণের সহযোগিতা করবে বিএনপি।

 

এমন পরিস্থিতিতে আন্দোলন দমাতে ৩ আগস্ট রাতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, শিক্ষক এবং কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন শেখ হাসিনা। তখন আন্দোলনকারীদের সাথে আলোচনায় বসার আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি।

 

অপরদিকে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়ায়দুল কাদের তখন পাল্টা কর্মসূচির ঘোষণা দেন। তিনি জানান, ৩ তারিখ থেকে রাজধানীসহ দেশের সকল নগর-মহানগরে জমায়েত কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ।

 

সেই পরিস্থিতি সেনাবাহিনীর ভূমিকার দিকে নজর ছিল রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ আপামর জনতার। এদিন ‘অফিসার্স অ্যাড্রেস’ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবসময় জনগণের পাশে আছে এবং থাকবে।

 

এরপর ক্রমাগত বেগবান হতে থাকে এক দফা আন্দোলন। এরই ফলশ্রুতিতে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। অবসান ঘটে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ স্বৈরাচারের। রচিত হয় নতুন এক ইতিহাস।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» র‌্যাংকিংয়েও আফগানদের টপকে গেল টাইগাররা

» রাজাকারের নাতিপুতি আখ্যা দেওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল অপমানজনক

» নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষ পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নেবে: টুকু

» রাতারগুলের অবকাঠামো উন্নয়নে সরকার পাশে থাকবে: আসিফ নজরুল

» প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘে যাচ্ছেন ৪ রাজনীতিবিদকে নিয়ে

» এবারের দুর্গাপূজা উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

» দুর্গাপূজায় আমাদের সর্বোচ্চ সতর্ক ও প্রতিরোধের প্রস্তুতি থাকতে হবে: তারেক রহমান

» পিআর দাবি জনগণের আঙ্খাকার সঙ্গে ‘মুনাফেকি’: রিজভী

» পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় অতন্দ্র প্রহরী হোন: নেতা-কর্মীদের মির্জা ফখরুল

» সফররত ইইউ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

৩ আগস্ট ২০২৪: শহীদ মিনার থেকে ঘোষিত হয় সরকার পতনের এক দফা

সংগৃহীত ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক : চব্বিশের ৩ আগস্ট আন্দোলনকারীদের কাছে ছিল ৩৪ জুলাই। এদিন নানা শ্রেণী-পেশার আপামর জনসাধারণ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হয়। উদ্বেলিত ছাত্র-জনতার প্রতিবাদী স্লোগানে প্রকম্পিত হয় ঢাকার আকাশ-বাতাস।

 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্ব ঘোষিত এই কর্মসূচিতে যোগ দিতে এদিন সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলে দলে মিছিল আসতে থাকে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই পুরো এলাকাটি জনসমুদ্রে পরিণত হয়। ৩ আগস্ট বিকেলে তৎকালীন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা সাফ জানিয়ে দেন ছাত্র-জনতার রক্তে রঞ্জিত আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। দাবি এখন একটাই- স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতন।

 

শিক্ষার্থীদের পক্ষে তৎকালীন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম সরকার পতনের এক দফার ঘোষণা দেন। তিনি বলেছিলেন, শেখ হাসিনার সরকার ও ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থার পতন ঘটাতে হবে।

 

এদিকে, শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে এদিন ব্যান্ড ও সংগীত শিল্পীরাও মাঠে নামেন। ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোবরে সংহতি জানিয়ে শিল্পীদের অনেকেই শহীদ মিনারে যোগ দেন। এছাড়াও, সেদিন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারাও সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন।

 

অন্যদিকে, ওইদিন বিএনপি তাদের অবস্থান জানালে সমর্থন আরও জোড়ালো হয়। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, শুধু নৈতিক সমর্থন নয়, আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সব ধরণের সহযোগিতা করবে বিএনপি।

 

এমন পরিস্থিতিতে আন্দোলন দমাতে ৩ আগস্ট রাতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, শিক্ষক এবং কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন শেখ হাসিনা। তখন আন্দোলনকারীদের সাথে আলোচনায় বসার আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি।

 

অপরদিকে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়ায়দুল কাদের তখন পাল্টা কর্মসূচির ঘোষণা দেন। তিনি জানান, ৩ তারিখ থেকে রাজধানীসহ দেশের সকল নগর-মহানগরে জমায়েত কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ।

 

সেই পরিস্থিতি সেনাবাহিনীর ভূমিকার দিকে নজর ছিল রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ আপামর জনতার। এদিন ‘অফিসার্স অ্যাড্রেস’ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবসময় জনগণের পাশে আছে এবং থাকবে।

 

এরপর ক্রমাগত বেগবান হতে থাকে এক দফা আন্দোলন। এরই ফলশ্রুতিতে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। অবসান ঘটে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ স্বৈরাচারের। রচিত হয় নতুন এক ইতিহাস।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com